মোঃ মামুন মিয়া
ট্রান্সফরমার এর ধারনা
আমরা জানি, পাওয়ার ট্রান্সফরমার ইনপুট এসি কে স্টেপ আপ অথবা স্টেপ ডাউন করতে ব্যবহৃত হয়। কোর এর আকার, ব্যবহার ও কাজের প্রকারভেদে অনেক ধরণের ধরনের
পাওয়ার ট্রান্সফরমার রয়েছে। যেমন, ল্যামিনেটেড (E-I) কোর, টরয়ডাল কোর, অটো ট্রান্সফরমার, ভেরিয়েবল
ট্রান্সফরমার। এছাড়াও রয়েছে উচ্চ ফ্রিকুয়েন্সি ফেরাইট কোর ট্রান্সফরমার। এটি সাধারণত SMPS ও ডিসি টু ডিসি কনভার্টারে বহুল
ব্যবহৃত হয়। পাওয়ার টান্সফরমার ছাড়াও অনেক
রকম ট্রান্সফরমার রয়েছে। যেমন ইন্সট্রুমেন্ট ট্রান্সফরমার,
পালস ট্রান্সফরমার, আরএফ ট্রান্সফরমার, অডিও ট্রান্সফরমার ইত্যাদি।
চিত্রঃ E-I কোর ট্রান্সফরমার, টরয়ডাল ট্রান্সফরমার, ভেরিয়েবল ট্রান্সফরমার বা VARIAC
(বাম দিক হতে)
আজকে আমরা
লেমিনেটেড E-I কোর ট্রান্সফরমার ডিজাইন, তৈরী
কৌশল ও হিসাব নিকাশ নিয়ে আলোচনা করব। ট্রান্সফরমার তৈরী বা ডিজাইন
করতে প্রথমে অনেক হিসেব নিকেশ করে নিতে হয়, যা বেশ সময় সাপেক্ষ। কাজকে সহজ করতে
আপনাদের জন্য একটি স্প্রেডশিট ক্যালকুলেটর দিলাম। এখন মিনিটেই হিসাব করে ফেলতে
পারবেন।
ট্রান্সফরমারের যে কয়েলে ইনপুট দেয়া হয় তাকে প্রাইমারি ওয়াইন্ডিং বা প্রাইমারি
কয়েল বলে আর যে কয়েলে আউটপুট নেয়া হয় তাকে বলে সেকেন্ডারি ওয়াইন্ডিং বা সেকেন্ডারি
কয়েল। প্রাইমারি কয়েলে যখন এসি পাওয়ার ইনপুট দেয়া হয় তখন প্রাইমারি কয়েলের
চতুর্দিকে ম্যাগনেটিক ফ্লাক্স তৈরি হয়। ট্রান্সফরমারের
কোর ম্যাগনেটিক ফ্লাক্সের জন্য কন্ডাক্টর হিসেবে কাজ করে।
ফ্যারাডের সূত্রানুশারে, একটি পরিবাহী এবং একটি চুম্বক্ষেত্রে যখন আপেক্ষিক গতি এরুপ বিদ্যমান থাকে যে পরিবাহীটি চুম্বক্ষেত্রকে কর্তন করে তবে পরিবাহীতে একটি EMF আবিষ্ট হয়। যার পরিমান ফ্লাক্স কর্তন এর বা ফ্লাক্স পরিবর্তনের হারের সাথে সরাসরি সমানুপাতিক। কোরের মাধ্যমে এই ম্যাগনেটিক ফ্লাক্স সেকেন্ডারি কয়েলে আবিষ্ট হয়ে ভোল্টেজ ও কারেন্ট তৈরি করে।
ট্রান্সফরমারের বিভিন্ন অংশঃ
২। কন্ডাক্টরঃ সাধারণত এনামেল ইন্সুলেশন
যুক্ত কপার কন্ডাক্টর ব্যবহৃত হয়। এলুমিনিয়ামও ব্যাবহার করা যায়। সেক্ষেত্রে
এলুমিনিয়াম কন্ডাক্টরের ব্যাস কপার কন্ডাক্টরের ব্যাসের 1.26 গুন বেশি হতে হবে (এলুমিনিয়ামের
কারেন্ট কন্ডাক্টিভিটি কপারের 61%)।
৩। ববিনঃ ববিনে কন্ডাক্টর কয়েল আকারে পেচানো হয়। বিভিন্ন
আকারের প্লাস্টিকের ববিন কিনতে পাওয়া যায়। সঠিক মাপের ববিন বাজারে কিনতে না পাওয়া
গেলে হার্ড বোর্ড, ফাইবার বোর্ড ইত্যাদি দিয়ে নিজেই তৈরি করে নিতে পারেন।
ডিজাইন ও হিসাব
কোর এর প্রস্থচ্ছেদের
ক্ষেত্রফল নির্ণয়ঃ কোরের যে অংশ দিয়ে ম্যাগনেটিক ফ্লাক্স লাইন ফ্লো হবে তার ক্ষেত্রফলই কোরের
ক্ষেত্রফল (নিচের প্রথম চিত্রে নীল অংশ ট্রান্সফরমারের এরিয়া)।
E-I কোরের ক্ষেত্রফল
ক্ষেত্রফল = প্রস্থ × উচ্চতা
Area = Width × Height
Power = (5.58 × Area)2
= 31.136 A2
পাক সংখ্যা ( Number of turns, N ) নির্ণয়ঃ
এখানে,
Number of turns, N =
প্রতি ভোল্ট এর জন্য পাক সংখ্যা
Flux density, H = কোরের প্রতি বর্গ ইঞ্চি প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফলে
মেগনেটিক ফ্লাক্স লাইন সংখ্যা
Area, A = বর্গ ইঞ্চিতে কোরের প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল
চলুন এখন একটি ট্রান্সফরমার ডিজাইনের হিসাব
খাতা কলমে ও সফটওয়্যারে দুই ভাবেই করা যাক।
উদাহরণঃ আমরা একটি
ট্রান্সফরমার তৈরি করব যার ইনপুট 220 ভোল্ট, একটি আউটপুট হবে 12 ভোল্ট 3 এম্পিয়ার
সেন্টার টেপ সহ এবং অপর একটি আউটপুট হবে 6 ভোল্ট 2 এম্পিয়ার।
সর্বমোট আউটপুট পাওয়ার হবে
* 12 ভোল্ট × 3 এম্পিয়ার = 36 VA
* 6 ভোল্ট × 2 এম্পিয়ার = 12 VA
· সর্বমোট পাওয়ার (36 +
12) VA = 48 VA
স্প্রেডশিট ক্যালকুলেটরে হিসাবঃ এটি একটি মাইক্রোসফট এক্সেল স্প্রেডশিট।
এটিকে ওপেন করতে হলে আপনার কম্পিউটারে মাইক্রোসফট এক্সেল, ওপেন অফিস, লিব্রে অফিস
অথবা যেকোন স্প্রেডশিট এপ্লিকেশন ইন্সটল থাকতে হবে। স্মার্ট ফোনেও একই ভাবে
মাইক্রোসফট এক্সেল, গুগল শিটস অথবা অন্য কোন স্প্রেডশিট এপ্লিকেশন ইন্সটল থাকতে
হবে। প্রথমে এখানে ক্লিক করে এক্সেল স্প্রেডশিট টি ডাউনলোড করে নিন।
স্প্রেডশিট ক্যালকুলেটর ব্যবহার বিধিঃ হাতে কলমে হিসেব করার সময়
(নীচে উল্লেখ আছে) ট্রান্সফরমারের লস হিসেব করতে হয়। এখানে কষ্ট করে সেটা করতে হবে
না, সফটওয়্যার অটোমেটিক্যালি সেটা করে নেবে। বাড়তি ঝামেলা নেই। চলুন দেখে নিই
কিভাবে ডাটা ইনপুট দিবেন।
উপরের ছবিতে এই রং এর সেল
গুলো ডাটা ইনপুট সেল এবং এই রং এর সেল গুলো রেজাল্ট এর সেল। আমরা 48VA
এর ট্রান্সফরমার ডিজাইন করব। মনে করুন আপনার কাছে যে কোর আছে তার Width
হচ্ছে 1 ইঞ্চি, এবং
ট্রান্সফরমারের আউটপুট পাওয়ার হবে 48VA. তাহলে Transformer-3 এর রো তে Width এর নীচে 1
ইনপুট দিলাম, তার ডানপাশে Power এর নিচে 48
ইনপুট দিলাম একই রো তে ডানপাশে আউটপুট গুলো চলে এসেছে।
Height
= 1.31 ইঞ্চি ও Turn per volt = 5.736 পাওয়া গেল।
এখন SWG টেবিল
হতে 0.24 Amp কারেন্ট ক্যাপাসিটির তার খুজে 30 SWG পাওয়া গেল। একই ভাবে 6V কয়েলের কারেন্ট 2 Amp
এর জন্য তার 20 SWG. 12V সেন্টার টেপড কয়েলের কারেন্ট 3 Amp
এর অর্ধেক বা 1.5 Amp এর জন্য তার 21 SWG.
হিসেব থেকে যা পেলাম এক নজরে দেখে নেয়া যাক,
* 220V কয়েল 1262 turns 30 SWG
* 6V কয়েল 35 turns, 20 SWG
* 12V কয়েল 69 × 2 turns, 21 SWG
* 220V কয়েল 1262 turns 30 SWG
* 6V কয়েল 35 turns, 20 SWG
* 12V কয়েল 69 × 2 turns, 21 SWG
হাতে কলমে হিসাবঃ আপনি সফটওয়্যার ব্যবহার না করে হাতে কলমে হিসেব করতে চাইলেও করতে পারেন। সময় বাচাতে ও নির্ভুল হিসেব পেতে সফটওয়্যার ব্যবহার করাই ভালো। প্রত্যেক ট্রান্সফরমারের কিছু লস আছে। মনে করি ট্রান্সফরমারটির লস হবে 10% বা ইফিসিয়েন্সি 90%। কাঙ্খিত 48 VA আউটপুট পেতে 48 এর 10% বেশি পাওয়ার বা 53.33 VA এর জন্য ডিজাইন করতে হবে। এড়িয়া এর সূত্র থেকে পাই,
সুতরাং আমরা যে ট্রান্সফরমার টি ডিজাইন করব তার প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল হবে 1.3088 বর্গ ইঞ্চি। এখন 1.3088 বর্গ ইঞ্চির কোর নির্বাচন করতে হবে।
* প্রাইমারী বা 220 ভোল্ট কয়েলে পাক সংখ্যা = 220 × 5.736 = 1262
* সেনেন্ডারি 12-0-12 ভোল্ট কয়েলে পাক সংখ্যা = 12 × 2 × 5.736 = 69 × 2
এখানে 69 পাক করে দুই কয়েল, যেহেতু এটি সেন্টার টেপ হবে।
* সেকেন্ডারি 6 ভোল্ট কয়েলে পাক সংখ্যা = 6 × 5.736 = 35
তারের গেজ নির্ণয়ঃ এ
ধরনের ট্রান্সফরমারের তাপমাত্রা, কুলিং ব্যবস্থা বিবেচনা করে তামার তারের প্রতি
বর্গ ইঞ্চি প্রস্থচ্ছেদ ক্ষেত্রফলের জন্য কারেন্ট ক্যাপাসিটি 2000 এম্পিয়ার ধরা
হয়। নীচের টেবিলে 2000 এম্পিয়ার/বর্গ
ইঞ্চি হিসেবে কারেন্ট ক্যাপাসিটি দেয়া আছে।
টেবিল হতে 0.24 A কারেন্ট ক্যাপাসিটির তার খুজে 30 SWG পাওয়া গেল। একই ভাবে 6V কয়েলের কারেন্ট 2 Amp
এর জন্য তার 20 SWG. 12V সেন্টার টেপ্ড কয়েলের কারেন্ট 3 Amp
এর অর্ধেক বা 1.5 Amp এর জন্য তার 21 SWG.
হিসেব থেকে যা পেলাম এক নজরে দেখে নিই,
* 220V কয়েল 1262 turns
30 SWG
* 6V কয়েল 35 turns, 20
SWG
* 12V কয়েল 69 turns × 2, 21 SWG
সতর্কতাঃ
১। কপার ওয়্যার প্যাচানোর সময় যেন তারের এনামেল ইন্সুলেশন নষ্ট না হয়ে যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
২। কপার ওয়্যার যেন কোর কে স্পর্শ না করে।
৩। কয়েল গুলো সুষম ভাবে প্যাচাতে হবে।
৪। ট্রান্সফরমারের হাম কমাতে কয়েল প্যাচানোর পর ইন্সুলেটিং ভার্নিশ দিয়ে রোদে শুকাতে হবে।
৫। কয়েল থেকে বাইরে সংযোগ তার বের করতে সোল্ডারিং করার আগে কয়েলের প্রান্ত সিরিশ কাগজ অথবা ছুরি দিয়ে এনামেল ইন্সুলেশন তুলে নিতে হবে।
৬। কয়েল থেকে বাইরে সংযোগ তার বের করতে ইন্সুলেটিং টিউব অথবা Heat Shrink Tube ব্যবহার করা ভাল।
৭। একটি কয়েল প্যাচানোর সময় সব প্যাচ একই দিকে দিতে হবে। অর্থাৎ এক কয়েলের সব প্যাচ Clockwise অথবা Anti-clockwise ভাবে ববিনে প্যাচাতে হবে।
৮। বাড়তি নিরাপত্তা হিসেবে ট্রান্সফরমারের বডি বা চেসিস আর্থিং করতে হবে।
৯। একটি ট্রান্সফরমার যত ভোল্ট এর জন্য ডিজাইন করা তার চেয়ে বেশি ভোল্টেজ ইনপুট দেয়া উচিত নয়। কারন, বেশি ভোল্টেজ ইনপুট দিলে ট্রান্সফরমার এর কোর স্যাচুরেটেড হয়ে যাবে এবং ট্রান্সফরমার এর ওয়াইন্ডিং ইন্ডাক্টরের মত আচরন না করে রেজিস্টর এর মত আচরন করবে। ফলে ট্রান্সফরমারের কপার লস অত্যাধিক বেড়ে গিয়ে সেটি অনেক গরম হবে, প্রটেকশন না থাকলে পুরে যেতে পারে।
১০। ট্রান্সফরমার যত ফ্রিকুয়েন্সির জন্য ডিজাইন করা, তার চাইতে কম ফ্রিকুয়েন্সিতে সেটিকে অপারেট করা উচিত নয়। কারন এতে করে ট্রান্সফরমারটিতে ওভার ভোল্টেজ এর মতই ইফেক্ট পড়বে।
আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে নীচে কমেন্ট করুন।
S.W.G
|
Diameter in Inch
|
Current at 2000 A/Inch2
|
Sectional area of wire in Inch2
|
1
|
0.3
|
142
|
0.07
|
2
|
0.27
|
120
|
0.06
|
3
|
0.25
|
100
|
0.05
|
4
|
0.23
|
84
|
0.04
|
5
|
0.21
|
70
|
0.03
|
6
|
0.19
|
58
|
0.028
|
7
|
0.17
|
48
|
0.024
|
8
|
0.16
|
40
|
0.02
|
9
|
0.14
|
32
|
0.016
|
10
|
0.12
|
26
|
0.013
|
11
|
0.11
|
22
|
0.01
|
12
|
0.10
|
18
|
0.008
|
13
|
0.09
|
14
|
0.007
|
14
|
0.08
|
10
|
0.005
|
15
|
0.07
|
8
|
0.0047
|
16
|
0.06
|
6
|
0.003
|
17
|
0.05
|
4
|
0.0025
|
18
|
0.048
|
3.6
|
0.002
|
19
|
0.04
|
2.6
|
0.0013
|
20
|
0.036
|
2
|
0.001
|
21
|
0.034
|
1.6
|
0.0008
|
22
|
0.028
|
1.2
|
0.0006
|
23
|
0.024
|
1
|
0.0005
|
24
|
0.022
|
0.8
|
0.0004
|
25
|
0.02
|
0.6
|
0.0003
|
26
|
0.018
|
0.50
|
0.00025
|
27
|
0.017
|
0.42
|
0.0002
|
28
|
0.015
|
0.34
|
0.00017
|
29
|
0.013
|
0.30
|
0.00014
|
30
|
0.012
|
0.24
|
0.00012
|
31
|
0.011
|
0.2
|
0.00011
|
32
|
0.0108
|
0.18
|
0.00009
|
33
|
0.01
|
0.14
|
0.00008
|
34
|
0.009
|
0.12
|
0.00007
|
35
|
0.008
|
0.10
|
0.00006
|
36
|
0.007
|
0.08
|
0.00005
|